রবিবার ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৫:৩০
ব্যস্ত মায়ের রজব–রমজান প্রস্তুতি

ছোট কাজ, বড় নিয়ত, বড় পরিবর্তন। মাতৃত্ব মানে থেমে যাওয়া নয়—বরং নতুনভাবে ফিরে আসা। রজব মাস আমাকে কখনো বলেনি, “তুমি মা, তাই এখন থামো।” বরং রজব আমাকে ডেকেছে ফিরে আসতে, কোরআনের দিকে ফিরে আসতে, নিজের হৃদয়ের দিকে ফিরে আসতে। দীর্ঘ সময়ের ভারী ইবাদতের আহ্বান নয়, বরং ছোট ছোট আন্তরিক মুহূর্তের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার ডাকই হলো রজবের প্রকৃত বার্তা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: রজব, শাবান ও রমজান—আত্মার প্রস্তুতির তিন ধাপ। আমাদের জীবনে রজব, শাবান ও রমজান—এই তিনটি মাস একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এই তিন মাসকে একত্রে না দেখলে রমজানের সৌন্দর্য ও গভীরতা পুরোপুরি উপলব্ধি করা যায় না। রজব হলো নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার মাস শাবান হলো অনুশীলন ও ধারাবাহিকতার সময়, আর রমজান হলো ফল লাভ, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্যের মাস। রজব আমাদের থামতে বলে, ভাবতে শেখায় এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার পথ দেখায়।

রজব মাসের গুরুত্ব ও আত্মিক আহ্বান
রজব হলো ইসলামের চারটি সম্মানিত মাসের একটি। এই মাসে পাপ ও অন্যায়ের দায়ভার আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। তাই রজব আমাদের জন্য এক নরম কিন্তু গভীর স্মরণ— “থামো, নিজের দিকে তাকাও, এবং আল্লাহর কাছে ফিরে এসো।”

ইসলামী ঐতিহ্যে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বলা হয়েছে—
“রজব হলো বীজ বপনের মাস, শাবান হলো সেই বীজে পানি দেওয়ার মাস, আর রমজান হলো ফসল কাটার মাস।” — লাতায়েফুল মা‘আরিফ

ব্যস্ত জীবনে বীজ বপনের সহজ পথ
দায়িত্ব, ক্লান্তি ও নিরন্তর ব্যস্ততার মাঝেও অল্প অল্প করে কিন্তু নিয়মিত কিছু ভালো অভ্যাসই পারে আমাদের আত্মাকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করতে। এটাই হলো আমাদের বীজ বপনের শুরু। আপনি চাইলে নিজেকে সহায়তা করার জন্য ছোট একটি নিয়ত-তালিকা তৈরি করতে পারেন—
• যে ওয়াক্তের সালাতে নিয়ম ভেঙে যায়, সেটি ঠিক করার আন্তরিক চেষ্টা।

• যে গুনাহ বা অভ্যাস আপনাকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, তা ত্যাগের সিদ্ধান্ত।

• সম্পর্কের ভাঙন মেরামত করা, ক্ষমা চাওয়া ও মন পরিষ্কার রাখা।

• রান্না, সন্তানের যত্ন, ঘরের কাজ—সবকিছুকে ইবাদতের নিয়তে করা

মনে রাখবেন— কাজ ছোট হলেও, নিয়ত বড় হলে তার মূল্য আল্লাহর কাছে অনেক বড়। রমজানের প্রস্তুতি নিন আজ থেকেই। রমজান হঠাৎ করে এসে পড়ে না। যে হৃদয় আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে, রমজান সেই হৃদয়ে নরমভাবে এসে বসে। আজ থেকেই কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর আমল শুরু করা যায়—
• আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখার অভ্যাস।

• প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত—অল্প হলেও নিয়মিত। (কারণ আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন ধারাবাহিক আমল)

• মন ও আত্মা হালকা করতে রাগ, অভিমান, হিংসা ও কষ্ট ঝেড়ে ফেলে ক্ষমার চর্চা।

এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে রমজান আর বোঝা মনে হবে না; বরং রমজান হয়ে উঠবে শান্তি, প্রশান্তি ও আল্লাহর সান্নিধ্যের মাস।মায়েদের জন্য বিশেষ বার্তা– সবাই হয়তো তাহাজ্জুদ, কিয়াম বা দীর্ঘ নফল ইবাদতে সময় দিতে পারবে। কিন্তু আপনি মা— আপনার প্রতিটি মুহূর্তই ইবাদত।শিশুকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, অসুস্থ সন্তানের পাশে জেগে থাকা, ঘরের কাজ সামলানো— সবই আল্লাহর পথে সওয়াবের কাজ, যদি আপনার নিয়ত সঠিক হয়।

মায়েদের জন্য দোয়া
হৃদয়কে শক্ত ও প্রশান্ত রাখতে এই দোয়াগুলো পড়তে পারেন—
▫️“হে আল্লাহ, শান্ত মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে আমাকে রমজানে পৌঁছানোর তৌফিক দিন।”

▫️“হে রব, রমজানের আগেই আমার ঘরে সহজতা, ভালোবাসা ও করুণা দান করুন।”

▫️“হে আল্লাহ, এমন শক্তি দান করুন—যা পুরো রমজান জুড়ে আমার ক্লান্ত শরীর ও ব্যস্ত জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে।”

আজ আমরা রজবে বীজ বপন করি, শাবানে তা লালন করি, আর রমজানে আল্লাহর রহমতের ফসল তুলতে প্রস্তুত হই—ইনশাআল্লাহ।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha